প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মান কি বাত’ কৃষকদের বিক্ষোভের কোনো সমাধান তো দিতে পারেনি, উল্টো রোববার বিক্ষুব্ধ কৃষকদের হুমকি, রাজধানী দিল্লিতে প্রবেশের পাঁচটি প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ করে ঘেরাও করা হবে।
সারা ভারত কৃষক সভার (এআইকেএস) নেতৃত্বে আরও কয়েকটি কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে চলমান এই বিক্ষোভে দেশটির লক্ষাধিক কৃষক মোদি সরকারের একটি বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।
কৃষক নেতা সুরজিৎ এস ফুল বলেন, ‘দিল্লি প্রবেশের পাঁচটি প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ করে রাজধানী ঘেরাও করবো। চার মাসের রেশন নিয়ে এসেছি। তাই কোনও চিন্তা নেই। আমাদের অপারেশন্স কমিটি সব বিষয়ে নজর রাখছে।’
আর এক নেতা বলেন, ‘সরকার বারবার বলছে আইন ভালো। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন একটাই। কে এই আইন তৈরি করতে বলেছিল? কোন সংস্থা সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছিল? তাদের নাম আমরা জানতে চাই।’
শনিবার কৃষকদের সামনে শর্তসাপেক্ষে আলোচনার যে প্রস্তাব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রেখেছিলেন, তাতে যে কোনও রকমের সাড়া মিলবে না, রোববারের বৈঠকের পর তা স্পষ্ট করে দিলেন কৃষক নেতারা।
শর্তসাপেক্ষে অমিতের প্রস্তাব মানা হবে কি না তা নিয়ে আজ রোববার বৈঠকে বসেন কৃষকরা। বৈঠক শেষে তারা জানিয়ে দেন, কোনও রকম শর্ত ছাড়া যদি সরকার আলোচনায় বসতে চায়, একমাত্র তা হলেই তারা রাজি।
প্রসঙ্গত, গত প্রায় পাঁচ-ছয়দিন ধরে ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তরপ্রান্তে এক বিশাল এলাকা কার্যত পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা হাজার হাজার কৃষকের কব্জায়। তারা সরকারের কৃষি সংশোধন আইন বাতিল চান।
নিজেদের ট্রাক্টর ও ট্রলিতে বেশ কয়েক মাসের রেশন নিয়ে, খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে শীতের রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়েই তারা রওনা দিয়েছিলেন দিল্লির পথে। তবে দিল্লিতে বিক্ষোভের অনুমতি পাননি তারা।
সম্প্রতি পার্লামেন্টে পাস হওয়া তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে তারা তুমুল আন্দোলন শুরু করছেন। এখন ভারতের রাজধানীর ‘লাইফলাইন’ জাতীয় সড়ক ৪৪ কার্যত তাদেরই দখলে।
এই অসংখ্য কৃষক দিল্লিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখায় রাজধানীর একটা বিস্তীর্ণ অংশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আরও বহু কৃষক দিল্লিতে ঢোকার চেষ্টায় সীমান্তে অপেক্ষা করছেন।
বস্তুত কৃষিখাতে সংস্কারের লক্ষ্যে আনা নতুন একগুচ্ছ বিলের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন কৃষক সংগঠন একযোগে প্রতিবাদ শুরু করেছিল গত সেপ্টেম্বর থেকেই। এর বিরোধিতা করছে কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধীদল।
প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস, সিপিআইএম, সিপিআই-সহ বিভিন্ন বাম দল ও একাধিক বিরোধী দল কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। এই আন্দোলনে সামিল এনডিএ জোট ত্যাগ করা শিরোমনি আকালি দলও।
সরকার বলছে, এই আইন চাষীদের জন্য নানা সুবিধা বয়ে আনবে। কিন্তু চাষীদের আশঙ্কা, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের জন্য তারা যে এতদিন সরকারের বেঁধে দেয়া ‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্য’ পেতেন, এবার আর তা থাকবে না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘বিভিন্ন কৃষিপণ্যের জন্য সরকারের নির্ধারিত সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তার বদলে বৃহৎ পুঁজিপতি বা কর্পোরেটদের মর্জির ভরসায় থাকা— ভারতের কৃষকরা এটাই আসলে মেনে নিতে পারছেন না।’
নীলকর সাহেবরা এক সময় যেভাবে দাদন দিয়ে কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করতেন, নতুন সিস্টেমে ছোট জমির মালিক ক্ষুদ্রচাষীরা অনেকটা একই রকম আশঙ্কায় ভুগছেন বলেও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন অর্থনীতিবিদরা।
পার্লামেন্টে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি দোলা সেন বলেন, ‘খাদ্যাভাব ও মহামারির সময় কৃষিতে যখন আরও সুরক্ষা প্রয়োজন; তখনই কর্পোরেট হাঙরদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে দেশের কৃষিকে।’
বিক্ষোভরত লক্ষাধিক কৃষকের দাবি, সরকার নতুন কৃষি আইন বাতিল করে এমএসপি (ন্যুনতম সহায়ক মূল্য) চালু করুক। কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, কোনও অবস্থায় রাজধানী দিল্লি ঘেরাও আন্দোলন বন্ধ করা হবে না।

